খুব ছোটবেলায় যখন আমরা গ্রামে থাকতাম, তখনকার স্মৃতি তেমন একটা মনে নেই। কেবল মনে আছে, একবার প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির মাঝে ধানক্ষেতের আইল পার হতে গিয়ে পায়ে বড়ই কাঁটা ফুটিয়ে ফেললাম। সে কি যন্ত্রণা। আমার যেটুকু ব্যথা, তার চেয়ে বেশি চিৎকার, তার সাথে মায়ের উৎকন্ঠ আর আমার বৃদ্ধা দিদিমার চারিদিকে ডাকাডাকিতে সারা পাড়া একাকার।
আমার স্কুল জীবন শুরু হয় শহরে। গ্রাম ছেড়ে চলে আসি। প্রতি বছর পরীক্ষা দিয়েই একমাসের বন্ধ। সোজা বাড়িতে দৌড় ছুটি কাটাতে। আসার সময় প্রতিবার মন খারাপ হওয়া। একটু একটু করে বড় হতে থাকি। শহুরে বন্ধু বাড়তে থাকে। তাদের সাথে সখ্যতা হয় আর এরই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ির প্রতি টান কমতে থাকে। এর একটা বড় কারণ ছিল এটাও, গ্রামের বিদ্যুতের অনুপস্থিতি। আর, কেন যেন প্রতি ঈদের ছুটিতেই বাবার গ্রামের বাড়িপ্রীতি অনাবশ্যক রকমের বাড়-বাড়ন্ত হয়! কত চিন্তা-ভাবনা করে রাখা, এবার এই এই নাটক দেখবো, এই সার্কাস দেখবো, কোথায় কি? সব ফেলে বসে থাকো। বিদ্যুৎই যেখানে নাই, সেখানে টেলিভিশন তো স্বপ্নলোকের ভাবনা। তাই, আর বাড়ি যেতে মন টানতো না। কিন্তু, তারপরও দেখা যেত বছর ঘুরে এপ্রিল এলেই আমরা সবাই আবারও গ্রামে!
ছোটবেলায় একটা খুব মজার ব্যাপার ছিল, গ্রাম থেকে থেকে ফেরার সময় যাকেই পায়ে হাত দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মাথা নুয়ে দিতাম, সে-ই বুকে জড়িয়ে নিতো, আর হাতে গুঁজে দিতো দু'টাকা- পাঁচ টাকার একটা কড়কড়ে নোট। বাধা নিয়ম। আমাকে এত আর ভাইয়াকে পাঁচ কিংবা দশ টাকা। খরচ হতো না। জমে যেতো। এই টাকার পরিমাণটা বেড়ে যেত পহেলা বৈশাখে।