দৃষ্টি আকর্ষণ: বিভিন্ন ব্লগে নানা সময়ের লেখাগুলো এখানে জমা প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি পাতা এখনো অসম্পূর্ণ। খুব শীঘ্রই সবকিছু সম্পন্ন হবে। ফিডব্যাক জানাতে পারেন এখানে।

২৮ আগস্ট, ২০১০

বুয়েটিয়ান বলে সহানুভূতি চাই না। কেবল গালি না দেবার প্রতিশ্রুতি চাই।

কারো কাছে কেউ সহানুভূতি চাইতে আসে নাই। বুয়েটের ছেলে বলে তার প্রতি বাইরের কাউকে নাকি কান্নাও করতে বলে নাই। যারা কান্না করতেছে, দিন-রাত সারাবেলা ঐছেলেটার পেছনে দৌড়াইছে, বা তার লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবার হাতে তুলে দিছে তারাও কিন্তু ঐ ছেলেটার বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছেলে।
বুয়েট বললে খুব সরলীকরণ হয়ে যায়, কিন্তু, তবুও এটা খুব গর্ব করেই বলতে পারি, এখনো আমাদের নিজেদের সাথে দেখা না হওয়া ১০/১২ বছর সিনিয়র কোন ভাই'র জন্য আমরা নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহে দৌড়াই, কিংবা জুনিয়র যে ছেলেটি মারা গেল, তার সাথে আখসান ভাই'র ব্যক্তিগত কোন পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও যে অনুভূতি সেটা আমাদের সবারই। কোথাকার কোন খান জাহান, তার সাথে আমার হয়ত বুয়েট জীবনে কখনো দেখাও হত না, তার নাম জানারো কোন সম্ভাবনা ছিল না, তাও আমাদের এত কেন জ্বালা? কেন এই ছেলেটা মরেছে বলে সবাই এত হই-চই করে ওঠে, কেন আমাদের নিজের ভাই মৃত্যুর মত ব্যথা লাগে?
সহজ করে বলি... এটা আমাদের অনুভূতি। বুয়েট আমাদের ৪-৫ বছরে যন্ত্রে পরিণত করে অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু, তার সাথে যেটা দেয়, সেটা এই "বুয়েটিয়ান" পরিচিতি।
এবার একটু বড় পরিসরে আসি। সম্রাটের তো কোন দোষ ছিল না। ইডেনের সামনে যেভাবে বাসগুলো দানবের মত চলাচল করে, তাতে সবাই সাবধানেই চলাফেলা করে। কিন্তু, কোন একটা দাঁড়িয়ে থাকা বাস যদি পেছনে হেল্পার ছাড়া হঠাৎ করে পেছনে চলা শুরু করে, সেটার দায়ও বুঝি সম্রাটদেরই নিতে হবে? বাহ, ভালো তো!!
তারপর? বাসের ধাক্কায় ছেলেটা পরে গেল। তাই দেখে একজন চিৎকার করে বাসকে থামতেও বললো, ড্রাইভার সেটা শুনেও থামলো না। ছেলেটার মাথার উপর দিয়ে চালিয়ে দিল। মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে গেল একটা পুরো পরিবারের স্বপ্ন। হাহ!! এটা কিছু না? এটা কেবল ছেলেটারই বেখেয়ালিপনা?
অনেকেই বলছেন বাস পোড়ানোর কথা। প্রথম আলোয় ছবি এসেছে বিশাল করে বাস পুড়ছে, তার সাথে ইনসেটে ছোট করে মায়ের আহাজারি। সাংবাদিকদের কাছে তো মায়ের আহাজারি খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, বাস পোড়ানো হয় কালে-ভদ্রে। তাই, তাদের কাছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর, আম্রা? যারা নিজেদের আর দশজনের থেকে একটু আলাদা দাবি করি, যারা নিজেদের আবেগ এখনো একটু হলেও অবশিষ্ট আছে বলে দাবি করি, তারাও কি অমন হয়ে গেলাম? তাদের কাছেও কি বাস পোড়ানোটাও মৃত্যুর চেয়েও বড় হয়ে গেল?
ইউনিভার্সিটি এলাকাটা একটু দেখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যাল কলেজ, ইডেন কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, (নাম মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে বকশি বাজারের মোড়ে)মহিলা কলেজ। এই এলাকায় এমনিই গাড়ি চলে কম। এখানে খালি পেয়ে বাসগুলো চলে তাদের ইচ্ছামত। তাদের নিজেদের রাস্তা। যেমন খুশি-তেমন চলা। অথচ এখানে কোন ভারি যানবাহন চলার অনুমতি পাবার কথা না। এখানে বাসের গতিসীমার একটা সীমাবদ্ধতা থাকার কথা। তার কিছুই নেই। হায়রে দেশ!! এখানে বাস মালিকের টাকার কাছে এ রকম দু'চারটা সম্রাট কিছুই না।
এবার সবচাইতে দৃষ্টিকটু যে ব্যাপারটা নিয়ে এত লেখালেখি, সেটা নিয়ে একটু বলি। বুয়েটের ছেলেরা বাস ভাংছে, এটা নিয়ে এত উত্তেজনা? কতক্ষণ ভাঙছে? সারাদিন ভাঙছে? সারা রাস্তা ধরে ভাংছে? সাময়িক উত্তেজনায় দুপুর পর্যন্ত ভাংচুর চলছে। তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল?
কই, বুয়েটের ছেলেরা তো পরদিন থেকে আর বাস ভাংগে নাই। আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরে তো জায়গায় কোন ভাংচুর চালায় নাই। কাল দুপুরে মিছিল হল, মৌন সমাবেশ হল। আজ দুপুরে মৌন মিছিল হল, মানব-বন্ধন হল। আমাদের ছেলেরা কি উত্তেজিত হয় না? আজ মিছিলেও তো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছিল। তাতে কি, যখন বুঝিয়ে বলা হল, তারা তো সবাই শান্ত। আর তো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলো না।
আমাদের দাবিগুলা কি জানেন? খুব সহজ কিছু দাবি। সেখানে কোন ভাংচুরের কথা নাই, কোন অন্যায্য কিছু নাই। মূল দাবিগুলা বলি..
১. দায়ি ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং বিচার।
২. ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে কোন ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ।
৩. পলাশীর মোড়ে কোন ধরণের যানবাহনের ইউটার্ন নিষিদ্ধ।
বুয়েটিয়ান একটা ছেলে মারা গেছে, সে বুয়েটিয়ান না হয়ে অন্য কেউও হতে পারতো, সে সম্রাট না হয়ে আমার-আপনার ভাই'ও হতে পারতো। তখন আপনি চুপ করে বসে থেকে ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে "নিরাপদ সড়ক চাই" দাবি জানিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারবেন, , কিন্তু আমি পারবো না।
আর, কেবল বুয়েট শুনেই অনেকের কেন জ্বালা ধরে, সেটা আমার ক্ষুদ্র মাথায় ঢোকে না। আমার ছোট ভাই মারা গেছে, আমি তার উত্তরে দশটা কথা লিখতে পারি। দশটা কথা বলতে পারি। সেটা নিয়ে পোস্টও দিতে পারি। আপনার এই সম্পর্কে কোন সহানুভূতি না থাকতে পারে, কিন্তু, তাই বলে কেন এসে বলে যাবেন,
ও বুয়েটের ছেলে? মরছে, ভালো হইছে। কি হইত, দেশের টাকায় পড়ে, বিদেশে গিয়ে চাকরি করতো।
কোন দেশে বাস করছি আম্রা? কেমন হচ্ছে আমাদের মানসিকতাগুলো। খুব জানতে ইচ্ছে করে, তারা কোন পরিবারের সন্তান? কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে তারা এই মানসিকতায় নিজেদের গড়ে তুলছে?
আমরা কেন আমাদের ছোট ভাই'র মৃত্যুর প্রতিবাদে ঘাতক বাসটি ধুম করে পুড়িয়ে দিলাম। কেন আরো দশজনের যাত্রাপথে অসুবিধার সৃষ্টি করলাম, তার উত্তরে কেউ যদি আপনাকে একজন ধর্ষক বানিয়ে দেয় তাহলে আপনার উত্তরটা কি হয়, সেটা জানার আমার খুব ইচ্ছা।
আর, সবশেষে এক বড় ভাইর কথা দিয়ে শেষ করি,
আমরা বাস পোড়ানোর ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবো। যারা যারা যথাসময়ে অফিস কিংবা কোন জরুরি কাজে অংশ নিতে পারেন নি, তাদের কাজও করে দেব। আপনারা কেবল সম্রাটের জীবন ফিরিয়ে দিন। যদি সেটা করতে না পারেন, তাহলে প্লিজ, আপনাদের দোহাই লাগে, এই রকম সুশীল মার্কা কথা বলবেন না।
[বাফড়া ভাই'র পোস্টের উত্তরটা ওখানেই দিতে চাইছিলাম, কিন্তু, অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় আলাদা করে দিলাম। বন্ধুদের কারো যদি দৃষ্টিকটু লাগে, তার জন্যে দু:খিত না। কারণ, আরো অনেক ব্লগে এমন কিছু পোস্ট দেখছি, যেগুলো পড়ে মাথায় আগুন ধরে গেছে। কিছু বলি নাই, গায়েও মাখি নাই। কিন্তু, এখানে এই পোস্টটা পড়ে খুব দু:খ পাইলাম। ভাইয়ার সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় আছে, তাই, উনি কিছু বলাতে গায়ে লাগে।]

প্রথম প্রকাশ: ১৯-৫-'১০ ইং
http://www.amrabondhu.com/muktoboyan/1244

2 comments:

নামহীন বলেছেন...

ধন্যবাদ ঠিক বলেছেন।

আসিফ বলেছেন...

লেখাটা ভাল লাগলো । বিশেষ করে পোস্টের শেষের বড় ভাইয়ের কথাটা "আমরা বাস পোড়ানোর ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবো। যারা যারা যথাসময়ে অফিস কিংবা কোন জরুরি কাজে অংশ নিতে পারেন নি, তাদের কাজও করে দেব। আপনারা কেবল সম্রাটের জীবন ফিরিয়ে দিন। যদি সেটা করতে না পারেন, তাহলে প্লিজ, আপনাদের দোহাই লাগে, এই রকম সুশীল মার্কা কথা বলবেন না।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
এখানে প্রকাশিত লেখা অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও পুন:প্রকাশ করবেন না। কোন লেখা বেশি পছন্দ হলে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার বেলায় একটু জানিয়ে যাবেন।
ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে একীভূত কোন লেখা অন্যত্র শেয়ার করতে পারেন।


Copyright 2009 মুক্ত বয়ান. Powered by Blogger Blogger Templates create by Deluxe Templates. WP by Masterplan modified by Mukto Boyan