দৃষ্টি আকর্ষণ: বিভিন্ন ব্লগে নানা সময়ের লেখাগুলো এখানে জমা প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি পাতা এখনো অসম্পূর্ণ। খুব শীঘ্রই সবকিছু সম্পন্ন হবে। ফিডব্যাক জানাতে পারেন এখানে।

২৮ আগস্ট, ২০১০

গান গল্প- ১ [চাঁদের ঐ আলো হয়ে আসো মোর ভাঙ্গা ঘরে..]

এমন একটা সময় ছিল, যখন খুব করে তোমার সান্নিধ্য পেতে চাইতাম। এখনও চাই, হয়ত। কিন্তু, তোমার কাছে পাত্তা পাই না। তোমার সময় হয় না, তুমি সারাদিন ব্যস্ত থাকো। আগের কাজগুলো থেকে মুক্তি পেয়েও তোমার ব্যস্ততা কমেনি, বরং আমাকে আগে যে সময়টুকু দিতে, সেখানেও এখন অনেক ভাগিদার। তুমি এখন কত বড়, কত বিস্তৃত তোমার পরিধি।
আর আমি? আমি সেই ঘরের কোণেই পরে রইলাম। সেই হুইল চেয়ারেই বসে থাকি। প্রায়ই জানলার পাশে অপেক্ষায় থাকি; যেভাবে তোমার- আমার প্রথম দেখা, প্রথম পরিচয়। মাঝে- সাঝে কারো করুণা হলে আমাকে ধরে ধরে নিচে নামিয়ে দেয়। আমি হাজারবার ঘুরে দেখা আমাদের সেই পুরোনো কলোনীটাকেই আবারও নতুন করে দেখি। নতুন করে আবিস্কার করার চেষ্টা করি। তুমি বিশ্বাস করবে, বললে? যতবার আমি কলোনীতে বেড়াতে বের হই, আমার কেন যেন এই অতি পরিচিত জায়গাটাকেই নতুন লাগে। প্রতিবারই যেন মনে হয়, আরে এই জায়গায় তো আগে কখনো আসা হয়নি। কলোনীর মাঝামাঝি যে একটা ডোবা মতন জায়গা আছে, সেখানে এসে প্রতিবারের মতই আবারও ভাবি, কি অসম্ভব সুন্দর এই জায়গাটা। এখানে কোন এক নিশুথ রাতে তুমি আমাকে নিয়ে আসবে আমার হাত ধরে। আমি নিজের পায়ে হেঁটে হেঁটে তোমার সাথে এখানে আসবো। শরৎকালে যখন সাদা কাশফুলে এই ডোবার চারপাশ ভরে ওঠে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। রোজ রোজ তো আর আসা হয় না, তাই একবার আসলেই সে জায়গার দৃশ্যগুলো মনের ক্যানভাসে এঁকে নিয়ে যাই। তুমি তো জানোই, আমি ছবি আঁকতে পারি। তাই, মনের দৃশ্যগুলোই আমার আঁকা ছবি হয়ে ফুটে ওঠে রং-তুলিতে।
তুমি কি জানো, আমি যে ছবিগুলোই আঁকি, সবগুলোতেই একটা শ্যামলা মত ছেলে থাকে, যার চুলগুলো পরিপাটি, হাতে ঘড়ি, কালো টি-শার্ট, নীল জিন্স। বলোতো ঐ ছেলেটা কে? আমি জানি, তুমি এই প্রশ্ন শুনে হেসেই উড়িয়ে দেবে, ‘আরে ধূর, এ আবার বলতে? এ তো আমি ছাড়া আর কে?’ কিন্তু, না বাপু, এ তুমি নও!! মনে আছে, তোমার জন্মদিনে আমি তোমাকে ঘড়ি, টি-শার্ট, জিন্স উপহার দিয়েছিলাম। তোমার সাথে কথা বলছিলাম, আর কিছু অসম্ভব মুগ্ধতাজাগানিয়া সময় কাটছিলো আমাদের। হঠাৎ কোত্থেকে যেন এক পথশিশু উদয় হল আমাদের পাশে। সমানে বিরক্ত করতে লাগল তার কাছ থেকে বাদাম কেনার জন্য। কি এক খেয়ালে যেন আমি গোঁ ধরলাম, তোমার জন্যে কেনা সমস্ত উপহার ঐ বাচ্চাকে দিয়ে দেবো বলে। আমি তোমাকে চিনি। তাই, তোমার কঠিন করে রাখা মুখের আড়ালে আমার পাগলামিকে প্রশ্রয় দেওয়া হাসি ঠিকই দেখতে পেয়েছিলাম। তাই তো ছেলেটিকে যখন সব কাপড়গুলো দিয়ে দিলাম, তোমার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। আর, ছেলেটি? উপহারগুলো পেয়ে তার যেন ঈদের চাঁদ হাতে পাওয়া। কি এক উচ্ছ্বসিত হাসিতে উদ্ভাসিত তার মুখ। আমি কখনো ভুলতে পারবো না। জানি আমি, তুমিও ভুলবে না ঐ মূহুর্তটুকু। নতুন পোশাকে বাচ্চাটিকে দেখতে লাগছিলো যেন কোন এক রাজপুত্তুর।
ধূর ছাই, কি সব এলোমেলো কথা দিয়ে ভর্তি করে ফেলছি। এত কথা পড়ার সময় কোথায় এখন তোমার? যা ব্যস্ততা! তুমি কি একটু সময় দেবে? একটি বার তোমাকে দেখতে খুব করে ইচ্ছে হয়। তোমার ছবির অ্যালবামটা আমি প্রতিদিন হাজার বার করে দেখি। তুমি কি জানো, ঐ অ্যালবামের প্রতিটি ছবি আমার মুখস্থ। ঐ যে খেয়াল আছে, একটা ছবিতে তুমি আর আমার বান্ধবী কাকলি একসাথে ছবি তুলেছিলে; যেটা দেখে কাকলির কি খুশি। তোমাদের নাকি মানিয়েছে বেশ। আমার চাইতে নাকি ওর পাশেই তোমাকে ভালো মানায়! তাই নিয়ে আমাদের সে কি ঝগড়া! তুমি দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলে? পরে আমি রাগে ছবিটাই ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। তুমি কি জানো, আমি সেই ছবির ছেঁড়া টুকরোগুলোও জমিয়ে রেখেছি। আমার ভালোবাসার মানুষের ছবি আমি ছিঁড়ে ফেলে দেবো, তাই কি করে হয়? তোমার মনে আছে, সূযার্স্তের একটা ছবি তুমি তুলেছিলে, যেটার কোণার দিকে একটু অংশ লালচে হতে গিয়ে পুরো সাদা হয়ে জ্বলে গেছে। তুমি সেটা ক্যামেরা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলে। কিন্তু, আমি মুছতে দেইনি। “থাক না, ডিজিটাল ক্যামেরার তো আর জায়গার অভাব নেই”, বলে। তুমি কি জানো, সেটাও আমি প্রিন্ট করেছি, তোমার অ্যালবামে রেখেছি, প্রতিবার সূযার্স্ত হবার সময় হলেই আমি মেঘের ফাঁকে সূর্যের লুকোচুরির মাঝে সেই লালচে সাদা অংশটা খুঁজে বেড়াই।
তোমার মনে আছে আগস্টের ৩ তারিখের কথা? পরদিন আমাদের হলুদ। বাসা ভর্তি মানুষ। এরই মাঝে লুকিয়ে চুপিয়ে তুমি অবিরত ফোন করে যাচ্ছো। আর, কখনো ছোট বোন, কাজিনরা ফোন ধরে তোমাকে খোঁচা, আবার কখনো খালা- চাচীরা ফোন ধরে লজ্জা দিয়ে যাচ্ছিলেন! কিন্তু, তুমি নিপাট নির্লজ্জের মত বারবারই ফোন করে যাচ্ছিলে। আর, তারাও বোধহয় পণ করেছিলেন তোমার সাথে আমাকে বিয়ের আগে কথা বলতেই দেবেন না! শেষে তারা মনে হয় অনেকটা বিরক্ত হয়েই আমাকে তোমার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেন। আর, আমি কথা বলতে শুরু করলেই বিকট স্বরে চিৎকার করে তোমাকে আমাকে জ্বালানোর প্রচেষ্টা। কি অপূর্ব একটা সময়। একটা অদ্ভূত ভালোলাগা অনুভূতি আমার সমস্ত সত্ত্বাকে যেন ঘিরে রাখছিল সেদিন।
আমার পাগলামিকে প্রশ্রয় দেওয়াটা মনে হয়, তোমার পাগলামির সূচনা। তাই তো, সেদিন রাত দু’টোয় হুট করে তোমার ফোন, “জানালা খোলো। তোমাকে দেখবো।”
আমি থ। বলে কি? “তুমি কই?”
: ঠিক তোমার জানালার নিচে। খুলো।
- ধ্যাৎ। যাও। এত রাতে? সবাই কি বলবে?
: আরে, সারাদিন আজ দেখা হয় নি। একটা বার।
হলুদের আগের রাতে নাকি একা ঘুমাতে নেই। তাই শুয়েছিলাম মায়ের সাথে। অনেকদিন পর সেই ছেলেবেলার স্মৃতি ফিরে আসছিলো যেন। মায়ের গায়ের ঘ্রাণের মৌতাত, মাথায় মায়ের হাত বুলানোর সেই অনাবিল আনন্দ। তাকে সামলে চুপিচুপি জানালা খুলে দিতেই জোছনায় আমার ঘর ভর্তি। নিচে তাকিয়ে তোমাকে দেখে আমার সে কি আনন্দ- খুশি। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে ফিরে তাকাতেই মায়ের স্নেহমাখা হাসিমুখ। জানালার পাশে ফোন হাতে আমার লজ্জাবনত মুখ দেখেই মায়ের সব বুঝে ফেলা। ঘরভর্তি মানুষকে ফাঁকি দিয়ে অত রাতে মেয়েকে তার হবু স্বামীর সাথে দেখা করার জন্যে দরজা খুলে নিচে নামার সুযোগ করে দেওয়া; এ বুঝি কেবল মায়েদের পক্ষেই সম্ভব।
তারপর? খুব দ্রুত ঘটে গেল সব কিছু। তোমার ক্ষ্যাপাটে হয়ে যাওয়া! আর আমার মাথায়ও পাগলামি ভর করা। রূপার থালার মতন পূর্ণ চাঁদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে মা’র নিষেধ অমান্য করে তোমার মোটরসাইকেলে চড়ে ঘুরতে বের হওয়া। চারদিকে অসম্ভব বেশি জোছনালোকিত রাতের রাজপথে হঠাৎ করেই চোখ চিড়ে প্রচন্ড সাদা আলো...

আজ সেই ৫ই আগস্ট। মনে আছে তোমার? আজ আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল.. আর কি আশ্চর্য দেখো, আজও আকাশে পূর্ণিমা। তুমি যেন “চাঁদের ঐ আলো হয়ে আসো মোর ভাঙ্গা ঘরে, দেখা যায়, যায় না ছোঁয়া.."

প্রথম প্রকাশ: ০৫-৭-'১০ ইং
http://www.amrabondhu.com/muktoboyan/1673

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
এখানে প্রকাশিত লেখা অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও পুন:প্রকাশ করবেন না। কোন লেখা বেশি পছন্দ হলে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার বেলায় একটু জানিয়ে যাবেন।
ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে একীভূত কোন লেখা অন্যত্র শেয়ার করতে পারেন।


Copyright 2009 মুক্ত বয়ান. Powered by Blogger Blogger Templates create by Deluxe Templates. WP by Masterplan modified by Mukto Boyan