দৃষ্টি আকর্ষণ: বিভিন্ন ব্লগে নানা সময়ের লেখাগুলো এখানে জমা প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি পাতা এখনো অসম্পূর্ণ। খুব শীঘ্রই সবকিছু সম্পন্ন হবে। ফিডব্যাক জানাতে পারেন এখানে।

৩১ মার্চ, ২০১০

[শিরোনামহীন গল্প]

"ঠাস! ঠাস!! ঠাস!!!"
পরপর তিনটা চড়ের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে মর্জিনা'র। এটা এমন কিছু নতুন না। তাই খুব একটা চিন্তিত না হয়ে পাশ ফিরে আবারও ঘুমের আয়োজন করে সে।
"আহ্!!"
এবার কুতকুতে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে সে ঘটনা কী??

রোজকার মতন আজও জাহাঙ্গীর কিছুটা টলছে। এটা একেবারে নিত্যকার ঘটনা। রোজ রাত করে সে ফিরবে, রাহেলা'র আধেক ঘুম ভাঙিয়ে শারীরিকভাবে চাইবে। রাহেলা মানা করবে, কিছুটা জোর-জবরদস্তি হবে। এরপর চড়-থাপ্পর। সূর্য যেমন পূবে উঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়, ঠিক তেমনি জাহাঙ্গীরের রাতের আক্রোশ ভোর হতে না হতেই সোহাগে পরিণত হয়!!


তবু, আজ যেন কিছুটা ব্যতিক্রম। রোজ রোজ মারামারি হয়, কিন্তু তারপরও তো এত শব্দ হয় না। আজ কেন রাহেলা এত উত্তেজিত?? চারপাশে তাকাতে চেষ্টা করে মর্জিনা। দেখে তার মতই আরও কয়েকজন আগ্রহী দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে জাহাঙ্গীর- রাহেলা'র দিকে। সবার চোখেই ঘুম। তবুও তাকিয়ে থাকা। সবাই তাদের মারামারির বিষয় নিয়ে জানে, তবুও আজ কিছুটা অন্যরকম। তাই সবার চোখই কিছুটা প্রশ্নবোধক।

জাহাঙ্গীরের দিকে তাকায় মর্জিনা। হঠাৎ করেই ঘুম উবে যায় চোখ থেকে। জাহাঙ্গীরের হাতের দিকে তাকাতেই চমকে ওঠে। জাহাঙ্গীর- মর্জিনার শিশু রমজান আলীকে পা ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। আতঙ্কে অস্থির হয়ে ওঠে মর্জিনা। জাহাঙ্গীরের শরীর পিছলে মর্জিনার দৃষ্টি পাশে দাঁড়ানো এক যুবতীর দিকে পড়ে।
"এ কে? একে তো আগে বস্তিতে দেখি নাই!!" নিজ মনেই ভাবতে থাকে সে। হঠাৎ জাহাঙ্গীরের কর্কশ কন্ঠ তার চিন্তার সুতো ছিঁড়ে দেয়।
"ছিনাল মাগী, হারামজাদি, কুত্তি.. আমি আছিলাম না। এর মইধ্যে এই কাম করছস?? এইডা আইল কই থেইকা??"

হতাশ হয় মর্জিনাকে!! রোজ রোজ একই ক্যাচাল। রোজ রোজ একই গালি। তার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। এরপর সে আওড়াতে থাকে.. "বেশ্যা, রাস্তার মাইয়া.." এটুকু গিয়েই তার কেমন যেন হাসি পায়!! তারা থাকে যাত্রাবাড়ি কালভার্টের পাশে রাস্তার উপর ফেলে রাখা বড় বড় স্ল্যাবের ভেতর। তাহলে তো সে রাস্তার মেয়ে হবেই!! যদি রাহেলা রাস্তার মেয়ে হয়, তবে জাহাঙ্গীর?? সে ও তো তাহলে রাস্তারই পোলা!! সে ফিক করে হেসে দেয়!!
কিন্তু, এ তো রোজকার ঘটনা। আজ তাহলে এত মানুষ কেন?? নতুন আসা এই মেয়েটিই বা কে??

এবার চিন্তায় বাধা দেয় রাহেলার চিৎকার!!
: তুমি এমন কর ক্যান?? তুমারে তো আমি কইছিই.. এইডা আমগো পুলা। তুমি পইত্য দিন মদ খাইয়া আইসা এমন কাইজ্জা কর। আমারে মার, ধর। আমি কিছু কইনা।
- তুই কি কবি রে খান..??
: তুমি যে রিকসা চালাও, একডা টেকা দিছ আমারে?? আমি পুলাডারে ক্যামনে খাওয়াই, কই থেইকা খাওয়াই তুমি জিগাইছ..
- চুপ থাক বজ্জাত।
: তুই চুপ থাক। আইজ তোর একদিন কি আমার একদিন। রোজ রোজ আমারে মারবি। আমি কিছু কই না। আইজ কই থেইকা এই দামড়া মাইডারে আনলি??
- তুই, আমারে তুই কইলি?? তোর এই পোলার আমি খ্যাতা পুড়ি..

ছুড়ে ফেলে দিতে যায় জাহাঙ্গীর। সাথে সাথে কেমন যেন কুকড়ে যায় রাহেলা। তার এতক্ষণের চিৎকার-চেঁচামেচি নিমেষে থেমে যায়। এক চিলতে বাতাসে চুপসে যায় সে। ঘোর লাগা চোখে চেয়ে থাকে জাহাঙ্গীরের দিকে।
জাহাঙ্গীরের চোখে তখন উন্মাদনা। রক্তে খুনের উত্তেজনা। পাগলের মত হাসি। অন্ধ আক্রোশে ছুঁড়ে মারে সে বাচ্চাটিকে রাস্তার দিকে।

রাহেলা কিংবা মর্জিনা কিংবা নতুন আসা মেয়েটি সবাই তখন নি:শ্বাস স্তব্ধ করে দেখতে থাকে কাঁথায় মোড়ানো একটা শিশু যা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা দূরপাল্লার বাসের কাছে নেহায়েতই একটা কাপড়ের দলা!!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
এখানে প্রকাশিত লেখা অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও পুন:প্রকাশ করবেন না। কোন লেখা বেশি পছন্দ হলে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার বেলায় একটু জানিয়ে যাবেন।
ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে একীভূত কোন লেখা অন্যত্র শেয়ার করতে পারেন।


Copyright 2009 মুক্ত বয়ান. Powered by Blogger Blogger Templates create by Deluxe Templates. WP by Masterplan modified by Mukto Boyan