দৃষ্টি আকর্ষণ: বিভিন্ন ব্লগে নানা সময়ের লেখাগুলো এখানে জমা প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি পাতা এখনো অসম্পূর্ণ। খুব শীঘ্রই সবকিছু সম্পন্ন হবে। ফিডব্যাক জানাতে পারেন এখানে।

৩১ মার্চ, ২০১০

ওঁ নম: মানব জনম/ ওঁ সর্ব ত্রুটি ক্ষম..

আমি জীবনে যে কয়েকটি জিনিস ভয় পাই তার মধ্যে রক্ত একটি। যদিও নিজেকে খুব সাহসী বলে দাবি করি তবুও ছোটবেলায় রক্ত পরীক্ষা দিলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যেত, প্রচণ্ড ঘাম শুরু হত। একবার ডাক্তারের চেম্বারেই এমন ঘাম শুরু হয়ে গেল উনি আমার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যান। এখানে মূল বিষয়টি বলে রাখি, মূল ভয়টি রক্ত নিয়ে না, মূল সমস্যা সূঁচে। সে ভয় কিভাবে গেল এটা অন্য প্রসঙ্গ। অন্য কোন দিন বলব। :)
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। হলে উঠলাম। প্রথম দিনেই যে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ হল সেখানে যথারীতি এল রক্তদান প্রসঙ্গ। এতদিন শুঘু সিনেমায় দেখেছি নায়ক নায়িকাকে, মা-কে রক্ত দেয়। তখন-ও জানতাম, যে রক্ত দেয় তার রক্তের ব্যাগটি তার থেকে উপরে ঝুলন্ত থাকে!!
যাই হোক, কয়েকদিনের মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তদাতাদের সংগঠন থেকে এসে সবার রক্তের গ্রুপ, নাম, মুঠোফোন নম্বর নিয়ে গেল। আর সাথে জানিয়ে গেল পরদিন আমাদের জন্য নবীনবরণ। তখন নতুন এসেছি। যেকোন অনুষ্ঠান হলেই যাই। নবীনবরণ মানেই খাওয়া-দাওয়া। এইটা মিস করা যায়?? =p~

অনুষ্ঠানে দেখি কয়েকজনকে স্মারক তুলে দিলেন আমাদের ভি.সি.। আমি পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, যারা রক্ত দেয় তাদের এই স্মারক দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে কয়েকজন এসে তাদের অভিজ্ঞতা বলল। কয়েকজন এসে বলল, "রক্ত দিলে নাকি জুস খাওয়া যায়!!" আমি তো খুশি। বাহ, এতো মজা!! :P
কয়েকদিন পর আমার খোঁজ পরল। সিনিয়ার ভাই একজন এসে বলল, "এই, তোমার গ্রুপ A+ না?"
আমি বলি, "হ্যা।"
আবার প্রশ্ন, "রক্ত দিছ আগে?"
-না।
"দিতে পারবা?"
সিনিয়র মানুষ। মুখের উপর তো আর মানা করা যায় না। তাই মনে মনে হিসেব করে নিই.. 'আজ বুধবার। একটু পর দিদির বাসায় যাব। কাজেই আমাকে আর পায় কে?' ;)
রাজি হয়ে যাই।
"জ্বি ভাইয়া। দিতে পারব।"
-তাহলে চল। এখন যাই।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ভাল মানুয়ি দেখাতে গিয়ে এ যে খাল কেটে কুমীর আনার মত, হাত ফুটো করে সুই নিয়ে এলাম!!! :((
মুখে কাস্ঠহাসি ফুটিয়ে বললাম, "কোথায় দিতে হবে?"
-কাছেই। ঢাকা মেডিকেল।

ভাইয়ার সাখে গেলাম। মনে বেজায় রাগ। রাজি না হলেই হত। এখন পস্তাও!!

গিয়ে শুয়ে পড়লাম। রক্ত নিতে এলেন যিনি তাকে দেখে তাকে দেখে আমার পুরোপুরি কসাইয়ের মত লাগল। চোখে-মুখে শয়তানি হাসি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলনে বিশাল এক সুঁই হাতে।
আমার সাথে যে ভাইয়া এসেছিলেন, তিনি বার বার সাহস দিতে লাগলেন। "দেখো কোন ব্যাথা লাগবে না।"
রক্ত নিতে আসা মানুষটি তখন একটা অপমানসূচক হাসি দিয়ে বললেন, "আগে রক্ত দেন নাই? এত বড় হইয়া গেছেন, এখনও রক্ত দেন নাই কেন?"
আমি অবাক। এখন যে প্রথমবারের মত রক্ত দিতে এসেছি এটার জন্য সাহস দিবে, না উল্টা ঝাড়ি। যথারীতি রক্ত নেয়া শুরু হল। এবং ব্যাগ টুলে। আমার মাথায় একটাই চিন্তা, 'আরে ব্যাটায় করে কি? রক্তের ব্যাগ নিচে ক্যান? এইখানে রাখলে রক্ত যাইব??'

এমন করে কতক্ষণ গেল। একটু পর উনি বলেন, "আরে আপনার ভেইন তো ব্লাড দিতাছে না!!" বলতে দেরি, সুঁই নিয়ে গুঁতাগুতি শুরু করতে দেরি নাই!!
আমার হাতের ভেতর সুঁই। তায় আবার গুঁতায়!! আমার জানা সব গালি দিয়ে তার গুষ্ঠি উদ্ধার করতে থাকি!! আর মুখে বলি, "আরে কি শুরু করলেন!! রক্ত নিতে পারেন না। ব্যাগ রাখছেন নিচে!! আবার গুঁতা-গুঁতি!!" চেহারায় একটা মেজাজ খারাপ আর কঠিন একটা ভাব চলে আসে মনে হয়। তাই দেখে উনি নির্বাক। মানুষ অধিক শোকে পাথর হয় আর উনি মনে হয় আমার কথা শুনে কংক্রীট হয়ে যান। এরপর আমাকে আর খুব একটা ঘাটান না। আমিও মনে মনে একটু স্বস্তি পাই। একটু পর রক্তদান পর্ব শেষ হলে রোগীর আত্মীয় একটা জুস এগিয়ে দেন। আমি শুয়ে শুয়ে জুস খেতে খাকি। আর চিন্তা করতে থাকি মাত্র একটা জুস!! :(

ভাইয়া বললেন, "চল তোমার সাথে রোগীর দেখা করিয়ে আনি।"
আমার তখন মেজাজ খারাপ। বলি, "থাক। বাদ দেন।"
আবার কি মনে করে সাথে থাকা রোগীর আত্মীয়ের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে গেলাম।

রোগীনি এক মধ্যবয়স্কা মহিলা। ক্যান্সার। মাথার চুল নেই। অল্প যে কয়টা আছে, তাও না থাকার মত। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, "এই ছেলেটা তোমার জন্যে রক্ত দিয়েছে।"
ভদ্রমহিলা স্বর্গীয় হাসি হেসে আমার দিকে তার একটি হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি আস্তে করে হাতটি ধরলাম। মনে হল যেন আমার মা, যাকে আমি ভর্তির পর থেকে ২ মাস দেখিনি, তিনি আমার হাত ধরে আছেন। সমস্ত কস্ট নিমেষে কমে গেল। মেজাজ খারাপ কমে সেখানে স্থান করে নিলো একরাশ আর্শীবাদ পাওয়া অনুভূতি।

আশার পথে সারাক্ষণ এই অনুভূতি। আর রক্ত না দিতে চাওয়ার প্রাথমিক ইচ্ছার জন্য নিজের কাছে নিজেরই লজ্জা পাওয়া।:``>>

প্রথম প্রকাশ: ১১-২-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28909681

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
এখানে প্রকাশিত লেখা অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও পুন:প্রকাশ করবেন না। কোন লেখা বেশি পছন্দ হলে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার বেলায় একটু জানিয়ে যাবেন।
ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে একীভূত কোন লেখা অন্যত্র শেয়ার করতে পারেন।


Copyright 2009 মুক্ত বয়ান. Powered by Blogger Blogger Templates create by Deluxe Templates. WP by Masterplan modified by Mukto Boyan