- ন্যা.. ন্যা।
: এমন করে না।
- না.. না.. না।
: লক্ষীটি এমন করে না তো।
- এটা আমার চাই। দেও না। দেও..
ন্যা.. ন্যা..
অসম্ভব রূপবতী একটি আঠারো- ঊনিশ বছরের মেয়ের কাছে প্রায় কাছাকাছি বয়সেরই একটি ছেলে একগুঁয়ের মত কিছু একটা চাইতে থাকে। মেয়েটি যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকে ছেলেটিকে বোঝানোর। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়না। বরং মাঝে মাঝে ছেলেটি হাত-পা ছুড়তে থাকে। মেয়েটি কিছুটা থমকে যায়। তবু হাল ছাড়ে না। আবার-ও বোঝাতে শুরু করে। আমার মত কিছু সুবিধাবাদী লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটির অসহয়াত্ব দেখতে থাকি। পাশের থেকে একটি স্যুট পরা ভদ্রবেশী মানুষ মন্তব্য ছুড়ে দেন.. "এহ্!! কি আল্লাদ!!"
আমি পাশ ফিরে তাকাই। সবাই কেমন যেন এক ধরনের লোলুপ চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তাকাই। পথ চলতে হঠাৎ পাওয়া এত সুন্দর মেয়েটিকে আমিও এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিতে চাই না।
হঠাৎ পেছন থেকে চট্ চট্ চটি জুতোর আওয়াজ তুলে ভীড় ঠেলে এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে আসেন। মেয়েটি তখনও ছেলেটিকে বোঝানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি গিয়ে আস্তে করে ছেলেটির কাঁধে হাত রাখেন। ছেলেটি ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে একদম শান্ত হয়ে যায়। তিনি বলেন, "বাবা, এমন করে না। এই নাও তোমার বেলুন। তুমি তো দু'টি চাইছিলে। এই নাও.. এখানে পাঁচটি।"
মেয়েটি একরাশ খুশি নিয়ে ভদ্রমহিলার দিকে তাকায়। তার চোখ ভরা অশ্রু। খুশির নাকি দু:খের- সেটি জিজ্ঞেস করা হয়নি। শুধু তাদের কথোপকথন থেকে এটুকু শুনতে পেয়েছিলাম..
- অপূর্ণাঙ্গ অবস্থায় জন্ম হয় ভাইয়ার। ছোট থেকেই তাকে দেখে-শুনে রাখতে হয়। সব সময় জেদ করেনা। কিন্তু মাঝে মাঝে ভয়ংকর জেদী হয়ে যায়, তখন তাকে সামলানো দায়।
ছেলেটি এতক্ষণ পেছন ফিরে ছিল। হঠাৎ এদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মেয়েটির মতই অনিন্দ্য সুন্দর একটি মুখ। শুধু হাতদু'টি স্বাভাবিক লম্বা নয়। আর হয়ত চোখদু'টিও একটু অসামন্জস্যপূর্ণ। তাতে কী!! সে যখন এদিক ফিরে মহিলাকে বলে, "আপনাকে ধন্যবাদ।" এত সুন্দর কন্ঠ হয়ত তাকেই মানায়!
আমার টিউশনিতে দেরি হয়ে যায়। আমি আস্তে আস্তে পা বাড়াই আজিমপুর থেকে আমার গন্তব্যে। চারপাশের এই কুৎসিত মানুষগুলোকে আমি আর যেন দেখতে পাই না।
আমার চারপাশে শুধু দু'টি কথাই আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে..
: এই নাও তোমার বেলুন।
- আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রথম প্রকাশ: ১৪-১-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28897315
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন