দৃষ্টি আকর্ষণ: বিভিন্ন ব্লগে নানা সময়ের লেখাগুলো এখানে জমা প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি পাতা এখনো অসম্পূর্ণ। খুব শীঘ্রই সবকিছু সম্পন্ন হবে। ফিডব্যাক জানাতে পারেন এখানে।

৩১ মার্চ, ২০১০

ঐতিহ্য রক্ষার পথে আর এক ধাপ!!

এখন পরীক্ষা চলছে। তাই ঠিক করেছিলাম, পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন পোস্ট করবনা। শুধু পোস্ট পড়ব, আর ১-২টা মন্তব্য করব। কিন্তু আজ ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা হাতে নিয়ে একটা সংবাদ পড়েই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।

সংবাদটা হবহু তুলে দিলাম:

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মাকড়াই গ্রামের ৩৩ শতকের মাঠটি এত দিন ফাঁকাই ছিল। সবাই জানে, এটা কান্তজিউ মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি। কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ করে ওই মাঠে দুটি টিন-চাটাইয়ের ঘর ওঠে। সামনে বাঁশের খুঁটিতে একটি সাইনবোর্ড বসে। তাতে লেখা ‘শান্তিবাগ আল হেরা নূরানী তা’আলীমূল কুরআন মাদ্রাসা’। অর্থাৎ মাদ্রাসার নামে কান্তজিউ মন্দিরের জমি দখলের প্রক্রিয়া।
কথিত মাদ্রাসা কতৃপক্ষের দাবি, তারা এক ব্যক্তির কাছ থেকে ওই জমি কিনেছে। ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি প্রশাসন থেকে ওই জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুযায়ী মন্দিরের জমি দেবোত্তর সম্পত্তি। তা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া যায় না। আবাদের জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের ইজারা দেওয়া যায়। বিক্রিও করা যায় না।
ঘর নির্মাণের আগেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার এসে ওই জমিতে মাপজোখ করে যায়। টের পেয়ে মন্দির সংশ্লিষ্টরা গত ১৭ জানুয়ারি বীরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তা সত্ত্বেও ঘর তোলা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে, পুলিশের সহায়তায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মন্দিরের জমিতে মাদ্রাসা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৫২ সালে দিনাজপুরের তৎকালীন জমিদার মহারাজা রামনাথ রায় বর্তমানের কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নে কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দির পরিচালনার জন্য তিনি দিনাজপুর সদর, বীরগঞ্জ, কাহারোলসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও ৩০ একর জমি দান করেন। আইন অনুযায়ী রাজ দেবোত্তর এস্টেট হিসেবে এই জমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। এস্টেটের ট্রাস্টি হিসেবে জেলা প্রশাসক ওই জমির রক্ষাকর্তা।
গত রোববার বিকেলে মাকড়াই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের জমিতে টিনের চালা, বাঁশ ও চাটাইয়ে ঘেরা দুটি নতুন ঘর। দরজা-জানালা নেই। ঘরের পূর্ব পাশে মন্দিরের জমির বাইরে বসবাসকারী ভ্যানচালক আব্দুল লতিফ (৫০) ও আনোয়ার হোসেন (৩০) জানান, ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি হঠাৎ কিছু লোক এসে এখানে ঘর বানিয়ে মাদ্রাসার সাইনবোর্ড টাঙায়।
দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট অমলেন্দু ভৌমিক প্রথম আলোকে জানান, বীরগঞ্জের মাকড়াই মৌজায় কান্তজিউ ঠাকুরের নামে সাতটি দাগে মোট ১৬ দশমিক ৫৩ একর জমি রয়েছে। ৯৫ নং দাগের ৩৩ শতক জমিতে মাদ্রাসার ঘর তোলা হয়েছে। বীরগঞ্জ কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান উন্নয়ন কমিটির উপদেষ্টা মতিলাল দাস বলেন, লক্ষ্মণ বুঝেই তিনি গত ১৭ জানুয়ারি জিডি করেন। তার পরও ঘর ওঠে। পুলিশও বাধা দেয়নি।
শান্তিবাগ আল হেরা নূরানী তা’আলীমূল কুরআন মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি পরিচয় দানকারী সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, বছর দুই আগে মাদ্রাসা কমিটির নামে মাকড়াই গ্রামের কৃষক মো. নুহর কাছ থেকে ছয় লাখ টাকায় ওই জমি কেনা হয়। চার লাখ টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। তবে এখনো রেজিস্ট্রি করা হয়নি। নাম খারিজও হয়নি। তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা নির্মাণে হিন্দুরা বাধা দিচ্ছে। তাই গত ২৪ জানুয়ারি থানায় জিডি করেছি। আমরা ওই জমি কিনেছি, প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকেও দলিল করে নেব। কিন্তু মাদ্রাসা সরানো হবে না।’
গ্রামের নাম মাকড়াই, কিন্তু সাইনবোর্ডে শান্তিবাগ লেখা কেন−এ প্রশ্নের উত্তরে কথিত মাদ্রাসা কমিটির সহসভাপতি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সাইনবোর্ডটা অন্য জায়গায় ছিল। সেখান থেকে এখানে আনা হয়েছে। এলাকার নাম পরিবর্তন করার সময় হয়নি।’
মো. নুহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে তিনি সরকারের কাছ থেকে ওই দাগের ৯৯ শতক জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেন। পরে নিজের নামে খারিজ করেন এবং বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করেন। সর্বশেষ ৩৩ শতক জমি মাদ্রাসা কমিটির কাছে বিক্রি করেন।
পাল্টাপাল্টি জিডির পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার বীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে সব পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ইউএনও হাসান মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী এক মাস কোনো পক্ষই ওই জমিতে কোনো রকম কাজ করতে পারবে না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক আইনগতভাবে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা মানতে বাধ্য থাকবে বলে উভয় পক্ষ লিখিত দিয়েছে।
বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, জিডি হওয়ার পর তিনি সেখানে কমপক্ষে সাতজন পুলিশ কর্মকর্তা পাঠান। ‘তার পরও কীভাবে ঘর উঠল’−এ প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঘর দুটি মনে হয় আরও আগে তোলা হয়েছে।’
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক নবীউল হক মোল্লা গত সোমবার বলেন, দেবোত্তর জমির রক্ষাকর্তা জেলা প্রশাসক। কান্তজিউ মন্দিরের জমি অবশ্যই দখলমুক্ত করা হবে।
সূত্র: প্রথম আলো, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯

আমি যতটুকু জানি, মন্দিরের জায়গা দেবোত্তর সম্পত্তি। তাই সেখানে কোন নতুন স্থাপনা হতে পারেনা। আর যদি ধরেও নিই যে, এই জায়গা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে মাদ্রাসা তৈরির জন্য দেয়া হয়েছে, তা-ও একটি প্রশ্ন, আর কোন জায়গা ছিল না, মাদ্রাসা করার?? যেখানে কান্তজিউ-র মন্দির ইউনেস্কোর আর্ন্তজাতিক উত্তরাধিকার বলে স্বীকৃত। আমরা কেন এই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যর পাশে স্থাপনা তৈরি করব?? মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। তার জন্য স্থানেরও প্রয়োজন রয়েছে। তাই বলে একটি ঐতিহ্য স্মারকের পাশে?? তাহলে আসুন, আমাদের সংসদ ভবনের পাশে, লালবাগ কেল্লার পাশে, স্মৃতিসৌধের পাশে তো অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে। সেখানে আমরা স্থাপনা তৈরি করি। আর, ঐতিহ্য রক্ষার দিকে আর এক ধাপ এগিয়ে যাই!!

প্রথম প্রকাশ: ৬-২-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28907412

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
এখানে প্রকাশিত লেখা অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও পুন:প্রকাশ করবেন না। কোন লেখা বেশি পছন্দ হলে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার বেলায় একটু জানিয়ে যাবেন।
ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে একীভূত কোন লেখা অন্যত্র শেয়ার করতে পারেন।


Copyright 2009 মুক্ত বয়ান. Powered by Blogger Blogger Templates create by Deluxe Templates. WP by Masterplan modified by Mukto Boyan