দৃষ্টি আকর্ষণ: বিভিন্ন ব্লগে নানা সময়ের লেখাগুলো এখানে জমা প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি পাতা এখনো অসম্পূর্ণ। খুব শীঘ্রই সবকিছু সম্পন্ন হবে। ফিডব্যাক জানাতে পারেন এখানে।

৩১ মার্চ, ২০১০

গর্ভে ধারণ অস্থির বচন/ মাঝে কিছুক্ষণ বিশ্বাসপ্রবণ (কথোপকথন- ৩)

: ভাই.. আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
- কী কথা?
(চোখে কেমন একটা সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়ে।)
: না, তেমন কিছু না। এমনি একটু কথা-বার্তা আর কি।
- time নাই। ফুটেন।
: বেশিক্ষণ নিব না। এইতো.. ধরেন.. ১০ মিনিট।
- আপনে সাংবাদিক?
: না তো।
- যাহ্ বেটা। ভাগ।
আমি একটু থতমত খেয়ে পিছিয়ে আসি। চলে যাই না। তাকিয়ে থাকি একদৃষ্টে। একটু মনে হয় করুণা হয় তার। একটু পর ডাক দেয়।

- কি চান আপনি?
: একটু কথা বলব।
- কি?
: আপনার নাম। পরিচয়। কোথায় থাকেন। কি করেন?
- দেখেন না কি করি? এতক্ষণ তো খাড়াযা খাড়ায়া দেখলেন। দিমু নাকি দৌড়ানি?
আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।
: নাহ। থাক। আপনাকে বিরক্ত করবো না বেশী।
একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন তিনি..
- আমার নাম রেজা।
- বাসা কোথায় জানি না। ছোট থেকেই এখানে। এদের সাথে। আজ এখানে.. কাল ওখানে। আর আমাদের তো ভাসমান জীবন। সবাই দূর দূর করে।
আমি চুপচাপ শুনতে থাকি। তাকে বাধা দেইনা।
- আপনারা আমাদের তো মনে করেন আমরা ইচ্ছা করে করে সবাই-র সাথে এমন করি। কিন্তু একটা কথা বলেন তো.. কোনদিন আমাদের মত মানুষদের জন্য চিন্তা করছেন? কোনদিন চিন্তা করছেন.. এদের য়ে কোন কাজে কেউ নেয় না.. এরা খায় কি?
আমি লজ্জিত হই।

- আইজ আমাদের খুব আনন্দের দিন। আজ আমাদের এখানে এক নতুদ মানুষ আসতেছে। ওর খাওয়া-দাওয়া-র খরচ আছে। দেখা-শোনার ব্যাপার আছে। তাই আজ অনুষ্ঠান করা হবে। তাই আজ টাকা তোলা হচ্ছে।
আমার প্রশ্নবোধক মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা আন্দাজ করতে পারে।
- আজ আমাদের সাথে একটা নতুন বাচ্চা আসবে। ওর বাসা থেকে আমাদের জানিয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে আসব। এখন থেকে সে আমাদের সাথে থাকবে।
: কেন? বাচ্চার বাবা-মা'র থেকে টাকা নেন। তারা তো বাচ্চার ভরনপোষণের টাকা দেবে।
- তো?? দিলেই কি আমরা নিব? আমরা তার বাবা-মা না? হেরা-ই যদি বাবা-মা হইয়া থাকে তাইলে নিজের পোলারে ফালাইয়া দিল ক্যান?
আমি আবার-ও অসহায়-র মত চুপ করে বসে থাকি। আসলেই আমার কি বলার নেই।
আমি তাকিয়ে থাকি তার দিকে। তাদের দিকে। যারা এখনও সম্পূর্ণ অচেনা একটি বাচ্চার জন্য আয়োজন করতে নিজেরা দোষী হচ্ছেন। আমি অবাক হই একদল অপূর্ণ মানুষের ভালোবাসায়, যারা সত্যিই অসাধারণ।
: আমি কি আপনাদের একটু সাহায্য করতে পারি? আমি যদি কিছু টাকা দিই আপনি নিবেন?
আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রেজা বা রোজিনা নামের মানুষটি হেসে বলে আপনি নিজ থেকে দিতে চাচ্ছেন? আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি বরং আজ বিকেলে আবার এখানে আসেন। এইখান থেকে আমরা যাব। আপনি আমাদের মেহমান হয়ে যাবেন।
আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলি.. বিকেলে তো আমার কাজ আছে। আমি তো হয়তো আসতে পারর না। তারচেয়ে অনাগত সেই শিশুর জন্য শুভকামনা।

আমি চানখারপুল আর বকশীবাজার-র মাঝামাঝি জায়গা থেকে রওনা দিই। আমার পেছনে পরে থাকে কিছু মানুষ যারা আমর মত স্বাভাবিক দাবি করা মানুষের কাছে অস্বাভাবিক। অপূর্ণাঙ্গ। না নারী, না পুরুষ।

প্রথম প্রকাশ: ১৯-১-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28899482

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
এখানে প্রকাশিত লেখা অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও পুন:প্রকাশ করবেন না। কোন লেখা বেশি পছন্দ হলে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার বেলায় একটু জানিয়ে যাবেন।
ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে একীভূত কোন লেখা অন্যত্র শেয়ার করতে পারেন।


Copyright 2009 মুক্ত বয়ান. Powered by Blogger Blogger Templates create by Deluxe Templates. WP by Masterplan modified by Mukto Boyan