দৃষ্টি আকর্ষণ: বিভিন্ন ব্লগে নানা সময়ের লেখাগুলো এখানে জমা প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি পাতা এখনো অসম্পূর্ণ। খুব শীঘ্রই সবকিছু সম্পন্ন হবে। ফিডব্যাক জানাতে পারেন এখানে।

৩১ মার্চ, ২০১০

কুষ্টিয়া ভ্রমণ- পর্ব ৪

আগের পর্ব

কথামত আমরা সবাই থেকে গেলাম সেদিন কুষ্টিয়াই। বিকেলের টিফিন খেয়ে আমি, এক বন্ধু আর জিলা স্কুলের পিচ্চিটা মিলে ঘুরতে বের হলাম কুষ্টিয়া শহর। গেলাম পৌরসভা। খুবই সুন্দর একটি পরিবেশ। ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে বিজয়উল্লাস নামে একটি স্মৃতিস্মারক। সেখানে একটি জাদুঘর আছে। যদিও দেরি হয়ে যাওয়ায় আর সেখানে ঢুকতে পারিনি। বাইরেই খুব সুন্দর কিছু টেরাকোটা'র কাজ রয়েছে। এরপাশেই রয়েছে একটি সোডিয়াম ল্যাম্প। জনশ্রুতি রয়েছে, এটি বাংলাদেশের প্রথম সোডিয়াম বাতি। একটু এগুলেই পৌরসভা অডিটোরিয়াম; এখনও নির্মাণাধীন। এর বাম পাশ দিয়ে এগুলেই একটি পুকুর। এটিই হল কুষ্টিয়ার মূল আড্ডাস্থল। পাড়েই একটি বটগাছ। চারপাশ বাঁধানো বেদী। এখানেই পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাগুনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো হয়। পৌরসভা থেকে বেড়িয়েই গেলাম কুষ্টিয়া শহররক্ষা বাঁধ দেখতে। ইংল্যাণ্ড শাসনামলের সাবেক এক মেয়র রেন উইক সাহেবের কীর্তি এটি।:)


পৌরসভার পাশেই হচ্ছিল কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম বইমেলা। বাইরে থেকে গান ভেসে আসছিল। বিপুল আগ্রহের সাথে দেখতে গেলাম। ভেতরে ঢুকে আমরা পুরো হতাশ।/:)সর্বসাকুল্যে ১১ টি দোকান। এর মধ্যে ১টি চটপটির, ১টিতে এক ছেলে-মেয়ে বসে মুড়ি-চানাচুর খাচ্ছিল(স্টলটি তারা ভাড়া নিয়েছিল কিনা সেটা অবশ্য জানি না!!B-)), ১টি দোকানে শুধু ১টি বই-ই পাওয়া যাচ্ছিল, আর ১টি দোকান ছিল কন্যাশিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি এনজিও'র। পুরো বইমেলায় আমার প্রাপ্তি, আমাদের বয়সী এক তরুণী লেখকের বই প্রকাশ।;) বইটি কেনার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পকেট তখন গড়ের মাঠ!! কিন্তু, একটা বিষয় আমার মন ভাল করে দেয়, কুষ্টিয়ার মানুষদের বইমেলা নিয়ে উৎসাহ। প্রচুর মানুষের ভীড়। সবাই একটি কথাই বলছেন, "প্রথমবারের মত এখানে বইমেলা, তাতেই আমরা খুশি।":)

এবার একটু অন্যদিকে যাই। আমরা দু'জন হোটেলে এসে সোজা ঘুম। ইতিমধ্যে আমাদের বাকি গ্রুপ ৫জন তখন আখড়ায়। সেখানে ব্যাপক গান-বাজনা। এখানে বলে রাখি কুষ্টিয়া গেলে যে বিষয়টি অবশ্যম্ভাবি, সেটি সিদ্ধি!! (সোজা বাংলায় গাঁজা।)B-) আর, এখানের গাঁজা ভয়াবহ অপরিশোধিত!! ঢাকায় যেগুলো পাওয়া যায়, ১-২টা খেলে তেমন কিছু হয়না। কিন্তু এখানকার জিনিস.. ২ টান দিলেই.. !!!!:-* আর এখানে সিদ্ধি একদম সহজলভ্য। হাত বাড়াতে হয়না। আপনার সামনে থালায় করে সাজানো আছে, আপনি শুধু নিয়ে নিয়ে খাবেন!!:P

আমরা যখন দুপুরে প্রথমবারের মত আখড়ায় উপস্থিত হই, তখন কিছুক্ষণ গান শোনার পর আমি উঠে একটু পাশে গিয়ে বসি। হঠাৎ একজন এসে সরাসরি প্রস্তাব দেয়, "ভাই, আপনাদের কি কিছু লাগবে?" :-/
এই অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে, তাই মানা করে দিলাম।
"ভাই মনে হয় বুঝতে পারেন নাই। আমি সিদ্ধির কথা বলছি।"
এবার আমি ঘটনা বুঝতে পারি। তাকে পাশে বসিয়ে গল্প জুড়ে দিই। সেও খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল। নানা কথা শেষে সে আবারও জিজ্ঞেস করল, "আমরা সিদ্ধি খাব কিনা??" তাহলে সে ব্যবস্থা করে দেবে।
আমি মানা করে দিলাম। সে'ও আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
কিন্তু, রাতে আমি ছিলাম না। যারা আখড়ায় গিয়েছিল, তারা কিভাবে যেন ব্যবস্থা করে ফেলল। আসলে তাদের কিছু করতে হয়নি। একই প্রস্তাব তাদেরকেও দেয়া হয়েছিল, তাদের কাজ ছিল শুধু প্রস্তাবে রাজি হওয়া!!:|

পরদিন সকাল। আমাদের পরিকল্পনা মেহেরপুর যাওয়ার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবাইকে ডাকতে গেলাম। দরজা খুলল..
বিছানায় দু'জন। নিচে একজন।
-ওঠ। যাবি না।
একজন লাল লাল চোখ নিয়ে তাকাল!! আর একজন মুখে আঙুল দিয়ে "শশশশশ" জাতীয শব্দ করে আমাকে কথা বলতে মানা করল!! আর তৃতীয় জন তো তার ফুসফুসে ভাত ঢুকে মৃত্যুচিন্তায় কাতর!!:((
আমি দৃশ্য দেখে হতভম্ব!! আবার ডাকলাম, "ঐ!!"
উত্তর..
- তুই তো জানস না। কাল অনেক কিছু ঘটছে। আমি যাব না।:|
: শশশশশশশশশ/:)
= আমার ফুসফুসে ভাত ঢুকে গেছে। এইটা পঁচে তো ব্যাকটেরিয়া হয়ে যাবে। আমি তো মরে যাব রে..:(( (বিছানা থেকে আমার দিকে উঠে আসতে থাকে।)
আমি তাড়াতাড়ি দরজা আটকে বাইরে থেকে লক করে দিই!!

ভয়ে ভয়ে পাশের রুমে যাই। দু-তিন বার নক করার পরও দরজা খোলে না!! আমি মনে মনে তাদের সবকয়টার গুষ্ঠি উদ্ধার করতে থাকি।X( একটু পর ঢুলুঢুলু চোখে|-) একজন উঠে দরজা খোলে। ভালমত তাকিয়ে বুঝি, এ সুস্থ!! কথা বলে বুঝতে পারলাম, রাতে তিনজন সিদ্ধির সন্ধান নিয়েছেন!! কিন্তু, সামলাতে পারছেন না। আর, "শশশশশশ" ব্যক্তি বাদে বাকি দু'জন রাতেই একদফা বমিও করেছেন। আর বমি করতে গিয়েই একজনের বিপত্তি!! গলায় ভাত আটকে যায়। আমরা যখন ঘুমে কাতর, তখন এই তিনজনকে সামলাতে বাকি দু'জন গলদঘর্ম!!:-&

যাই হোক। তিনজনকে এক রুমে রেখে তালা আটকে আমরা একজনের জিম্মায় রেখে বাকি তিনজন রওয়ানা হই মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে।
যখন আমাদের বাস ছাড়ে তখন সকাল সাড়ে ন'টা। তারিখ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি!! 

প্রথম প্রকাশ: ৯-৩-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28921799 

1 comments:

রাসেল আশরাফ বলেছেন...

বাহ মুক্ত!!!!!!!তোমার জন্য অনেক দিন পর কুষ্টিয়া ঘুরে আসলাম।সেই সাত মাস পর।আমার জন্মস্থান কুষ্টিয়া কিন্তু সেভাবে থাকা হয়নি কোন দিন কিন্তু কেন জানি এই শহরটাতে গেলে সব কিছু আপন মনে হয়।রেইনউক বাধেঁ কত বিকাল বেলা যে পার করেছি বা নদী পাড় হয়ে সামনের গ্রামের রাস্তা সবই অসাধারণ!!!!!!!!!!!!!!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
এখানে প্রকাশিত লেখা অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও পুন:প্রকাশ করবেন না। কোন লেখা বেশি পছন্দ হলে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার বেলায় একটু জানিয়ে যাবেন।
ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে একীভূত কোন লেখা অন্যত্র শেয়ার করতে পারেন।


Copyright 2009 মুক্ত বয়ান. Powered by Blogger Blogger Templates create by Deluxe Templates. WP by Masterplan modified by Mukto Boyan