কথামত আমরা সবাই থেকে গেলাম সেদিন কুষ্টিয়াই। বিকেলের টিফিন খেয়ে আমি, এক বন্ধু আর জিলা স্কুলের পিচ্চিটা মিলে ঘুরতে বের হলাম কুষ্টিয়া শহর। গেলাম পৌরসভা। খুবই সুন্দর একটি পরিবেশ। ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে বিজয়উল্লাস নামে একটি স্মৃতিস্মারক। সেখানে একটি জাদুঘর আছে। যদিও দেরি হয়ে যাওয়ায় আর সেখানে ঢুকতে পারিনি। বাইরেই খুব সুন্দর কিছু টেরাকোটা'র কাজ রয়েছে। এরপাশেই রয়েছে একটি সোডিয়াম ল্যাম্প। জনশ্রুতি রয়েছে, এটি বাংলাদেশের প্রথম সোডিয়াম বাতি। একটু এগুলেই পৌরসভা অডিটোরিয়াম; এখনও নির্মাণাধীন। এর বাম পাশ দিয়ে এগুলেই একটি পুকুর। এটিই হল কুষ্টিয়ার মূল আড্ডাস্থল। পাড়েই একটি বটগাছ। চারপাশ বাঁধানো বেদী। এখানেই পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাগুনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো হয়। পৌরসভা থেকে বেড়িয়েই গেলাম কুষ্টিয়া শহররক্ষা বাঁধ দেখতে। ইংল্যাণ্ড শাসনামলের সাবেক এক মেয়র রেন উইক সাহেবের কীর্তি এটি।

পৌরসভার পাশেই হচ্ছিল কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম বইমেলা। বাইরে থেকে গান ভেসে আসছিল। বিপুল আগ্রহের সাথে দেখতে গেলাম। ভেতরে ঢুকে আমরা পুরো হতাশ।




এবার একটু অন্যদিকে যাই। আমরা দু'জন হোটেলে এসে সোজা ঘুম। ইতিমধ্যে আমাদের বাকি গ্রুপ ৫জন তখন আখড়ায়। সেখানে ব্যাপক গান-বাজনা। এখানে বলে রাখি কুষ্টিয়া গেলে যে বিষয়টি অবশ্যম্ভাবি, সেটি সিদ্ধি!! (সোজা বাংলায় গাঁজা।)



আমরা যখন দুপুরে প্রথমবারের মত আখড়ায় উপস্থিত হই, তখন কিছুক্ষণ গান শোনার পর আমি উঠে একটু পাশে গিয়ে বসি। হঠাৎ একজন এসে সরাসরি প্রস্তাব দেয়, "ভাই, আপনাদের কি কিছু লাগবে?"

এই অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে, তাই মানা করে দিলাম।
"ভাই মনে হয় বুঝতে পারেন নাই। আমি সিদ্ধির কথা বলছি।"
এবার আমি ঘটনা বুঝতে পারি। তাকে পাশে বসিয়ে গল্প জুড়ে দিই। সেও খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল। নানা কথা শেষে সে আবারও জিজ্ঞেস করল, "আমরা সিদ্ধি খাব কিনা??" তাহলে সে ব্যবস্থা করে দেবে।
আমি মানা করে দিলাম। সে'ও আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
কিন্তু, রাতে আমি ছিলাম না। যারা আখড়ায় গিয়েছিল, তারা কিভাবে যেন ব্যবস্থা করে ফেলল। আসলে তাদের কিছু করতে হয়নি। একই প্রস্তাব তাদেরকেও দেয়া হয়েছিল, তাদের কাজ ছিল শুধু প্রস্তাবে রাজি হওয়া!!

পরদিন সকাল। আমাদের পরিকল্পনা মেহেরপুর যাওয়ার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবাইকে ডাকতে গেলাম। দরজা খুলল..
বিছানায় দু'জন। নিচে একজন।
-ওঠ। যাবি না।
একজন লাল লাল চোখ নিয়ে তাকাল!! আর একজন মুখে আঙুল দিয়ে "শশশশশ" জাতীয শব্দ করে আমাকে কথা বলতে মানা করল!! আর তৃতীয় জন তো তার ফুসফুসে ভাত ঢুকে মৃত্যুচিন্তায় কাতর!!

আমি দৃশ্য দেখে হতভম্ব!! আবার ডাকলাম, "ঐ!!"
উত্তর..
- তুই তো জানস না। কাল অনেক কিছু ঘটছে। আমি যাব না।

: শশশশশশশশশ

= আমার ফুসফুসে ভাত ঢুকে গেছে। এইটা পঁচে তো ব্যাকটেরিয়া হয়ে যাবে। আমি তো মরে যাব রে..

আমি তাড়াতাড়ি দরজা আটকে বাইরে থেকে লক করে দিই!!
ভয়ে ভয়ে পাশের রুমে যাই। দু-তিন বার নক করার পরও দরজা খোলে না!! আমি মনে মনে তাদের সবকয়টার গুষ্ঠি উদ্ধার করতে থাকি।



যাই হোক। তিনজনকে এক রুমে রেখে তালা আটকে আমরা একজনের জিম্মায় রেখে বাকি তিনজন রওয়ানা হই মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে।
যখন আমাদের বাস ছাড়ে তখন সকাল সাড়ে ন'টা। তারিখ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি!!
প্রথম প্রকাশ: ৯-৩-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28921799
1 comments:
বাহ মুক্ত!!!!!!!তোমার জন্য অনেক দিন পর কুষ্টিয়া ঘুরে আসলাম।সেই সাত মাস পর।আমার জন্মস্থান কুষ্টিয়া কিন্তু সেভাবে থাকা হয়নি কোন দিন কিন্তু কেন জানি এই শহরটাতে গেলে সব কিছু আপন মনে হয়।রেইনউক বাধেঁ কত বিকাল বেলা যে পার করেছি বা নদী পাড় হয়ে সামনের গ্রামের রাস্তা সবই অসাধারণ!!!!!!!!!!!!!!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন