ভ্যানে করে আমরা এসে পৌঁছি গড়াই সেতুতে। সেখানে সূর্যোদয় দেখে প্রচুর পরিমাণ ছবি তুলে রওয়ানা হলাম শিলাইদহের পথে। তখনও আন্দাজ নেই কতদূর। যেতে কতক্ষণ লাগে!! হাঁটছি তো, হাঁটছিই। থামাথামি নাই!! এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম। বললেন, এই তো আর ১০ মিনিট গেলেই আলাউদ্দিন নগর। সেখান থেকে রিকশা/ ভ্যান। আমরা ১০ মিনিটের জায়গায় ৩০ মিনিট হাঁটার পরও আলাউদ্দিন সাহেবের নগরের দেখা পেলাম না।

আমরা এবার বুঝে গেছি, আরও দূর আছে ভালই। হাঁটতে হাঁটতে একটা ভটভটি( শুদ্ধ ভাষায় নসিমন) পেয়ে গেলাম। দেরি নাই। সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে পরলাম।
চলতে লাগল নসিমন। সে এক ভয়াবহ যাত্রা!! একটু যায়, ইন্ঞ্জিন যায় বন্ধ হয়ে।


অবশেষে ৭ বার এভাবে বিকল হওয়ার পর আমরা পোঁছলাম শিলাইদহ। রবী ঠাকুরের কুঠি বাড়ি।
গেটে টিকেট কাউন্টার। আমরা যারা এদেশি, তাদের জন্য প্রবেশমূল্য ১০/-, আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০/-
ঢুকতেই যে ব্যাপারটি প্রথমেই চোখে পড়বে তা হল, প্রচুর সংখ্যক আম গাছ। সব গাছে গাছে আমের মুকুল। এরপর একটি বেদি আছে, রবী ঠাকুরের কয়েকটি কবিতার ২ টি করে লাইন এখানে লেখা। একটু এগুলেই ডানে মূল বাড়ি। আর বামে রবীন্দ্র মঞ্চ।
মূল ভবনটি দোতলা। নিচতলার সোজা ঘরটিতে রয়েছে একটি টেবিল, যেটিতে বসে তিনি খাজনা আদায় করতেন। বামদিকের কক্ষটিতে রয়েছে দু'টি পালকি, একটি চেয়ার যেটি আবার অন্যে বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়।
দোতলায় তাঁর শোবার ঘর রয়েছে। সেখানে তাঁর ব্যবহৃত একটি খাট আছে। আর বারান্দায় একটা নৌকা মত আছে। এটার ইতিহাস কি সেটা জানতে পারিনি।

এই কুঠিবাড়িতে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয়, তা হল, এখানে প্রচুর সংখ্যক ছবি রয়েছে। গান্ধীজি'র সাথে, আইনস্টাইনের সাথে, তার পুত্র-কন্যাদের সাথে, তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর সাথে। এখানে কবির নিজের হাতে লিখিত একটি কবিতা, একটি বাংলা চিঠি, একটি ইংরেজী চিঠিও আছে। আর আছে কবির আঁকা কয়েকটি ছবি। এখানে কবির একটি প্রমাণ আকারের ছরিও আছে।
শোবার ঘরের পাশেই একটি বাথরুম আছে। সেখানে একটি ইংলিশ কমোড বসানো। আমরা ঠিক বুঝতে পারিলাম না, এটা কি কবি ব্যবহার করতেন? নাকি ইদানীংকালে বসানো!!

কুঠির পেছনে একটি টেনিস কোর্টও দেখা যায়!! মনে হয় কবি স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত টেনিস খেলতেন!!

কুঠি বাড়ির চারপাশে বাগান। প্রচুর ফুল ফুটে আছে। খুবই শান্ত পরিবেশ।
আমাদের এক বন্ধুর সেখানে গিয়ে বাথরুম পাওয়ায়, সে আমাদের ফেলে টয়লেটের সন্ধানে যায়। আমরা ততক্ষণ কুঠিবাড়ির সামনে বসে কবিগুরু প্রতি সম্মানার্থে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া শুরু করি। অবশ্যই আমাদের ঢং-এ!!

সেখানে একটি ভ্রাম্যমান বইয়ের দোকান আছে। আমরা আগ্রহ নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে বইয়ের সংগ্রহ দেখে আশ্চর্য হই!! সবই কেবল প্রশ্নবোধক বই!! প্রেম কেন বেদনা?, তুমি কেমন আছ? এর মাঝে অবশ্য কয়েকটি রবীন্দ্রনাথের বইও আছে। তবে সেগুলো না থাকার মতই!! /

কাছেই পদ্মা নদী। নদীতে চর জেগেছে। নৌকা করে সেখানে যাওয়া যায়। আমরা সদলবলে নৌকায় উঠে বসলাম। ১৫-২০ হওয়ার পর ভাবলাম, এবার নৌকা ছেড়ে দেবে। কিন্তু হায়!! আরও ১০-১৫ উঠল। সাইকেল উঠল, মোটর-সাইকেল উঠল, এমনকি একজন কোলে করে ছাগল সহ উঠে বসল!!

চরে আমাদের নামিয়ে চলে যাবে নৌকা। আবার আমরা ফোন করলে এসে নিয়ে যাবে। আমরা নামতে গেলাম। নদীর গভীরতা অসমান। হঠাৎ করে আমাদের একজন পানিতে পড়ে গেল!! পুরোপুরি স্নান!! স্বচ্ছ পানি পদ্মায়। কাজেই খুব একটা খারাপ হয়নি তার জন্য। এমনিতেও অবশ্য আমরা সবাই পরে পদ্মায় স্নান করেছি। খুব মজার জায়গা।

প্রায় দেড়-দুই ঘন্টা থেকে আমরা আবার নৌকা করে পাড়ে ফিরে এলাম। সেখান থেকে আবার নতুন একটা নসিমন ভাড়া করে রওয়ানা দিলাম। গন্তব্য কুষ্টিয়া শহর, লালন সাঁই'র মাজার।
কিছু ছবি দিলাম। যথারীতি সাকিব-এর তোলা আর অল্প কয়েকটি (১,৩,৬,৭,১২,১৩,১৪,১৬,১৭) আমার তোলা!
আমাদের নষ্ট নসিমন
কুঠিবাড়ি
আমের মুকুল
টেনিস কোর্ট!!
প্রমাণ আকারের ছবি
সস্ত্রীক(মৃণালিনী দেবীর বয়স তখন মাত্র ১২!!) রবি ঠাকুর
আইনস্টাইনের সাথে কবি
কবির হাতে লেখা কবিতা
মহাত্মাজী'কে লেখা চিঠি
কবির ব্যবহৃত খাট
পালকি
ভ্রাম্যমান লাইব্ররি!!
আমাদের রবীন্দ্রসংগীত চর্চা:
পরবর্তী পর্ব
প্রথম প্রকাশ: ৪-৩-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28919836
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন