আমাদের পরীক্ষা শেষ হয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি। এবার পরিকল্পনা ছিল বন্ধে নেপাল যাব। এই পরিকল্পনা গত জানুয়ারির। কিন্তু, কাজের বেলায় দেখা গেল টাকা নাই কারোরই!! তাই, পরিকল্পনা পরিবর্তিত। দেশেই যাওয়া হবে কোথাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রুয়েটের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগ থেকে সুন্দরবন যাওয়ার একটা ব্যবস্থা করা সম্ভব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটাও ভেস্তে গেল!! হঠাৎ কি এক কথা প্রসঙ্গে উঠল কুষ্টিয়ার কথা। ঘরপোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাই!! এবার সাথে সাথে লাফিয়ে উঠলাম। না, এবার কুষ্টিয়া যাবই, যাব। যাওয়ার দিন হঠাৎ আবার পরিকল্পনার পরিবর্তন। যেদিন যাওয়ার কথা, সেদিন না। ২ দিন পরে যাওয়ার প্রস্তাব। ছেলেপিলের মাথা খারাপ করে একরকম জোর-জবরদস্তি করেই যাওয়ার দিন না পিছিয়ে নির্দিষ্টদিনেই সবাইকে রাজি করিয়ে বাসের টিকেট কাটালাম।
যাত্রা শুরু ২৩ শে ফেব্রুয়ারি রাত ১১.৩০ টায়। স্থান গাবতলী বাস-স্ট্যান্ড হানিফ পরিবহন (সড়কপথে বিমনের ছোঁয়া!!)
হল থেকে গাবতলী যাবার পথে বাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষকের সাথে পরিচয়। তার মাধ্যমে কোথায় উঠব, কোথায় কোথায় যাওয়া যায় এসব ব্যাপারে কিছু তথ্য জ্ঞান-ভান্ডারে জমা করলাম!! এই শিক্ষকের কথায় পরে আসব।
হানিফের বাস কাউন্টারের সামনে বসে আছি। সবাই কিছু না কিছু কেনা-কাটা করলাম। কেউ আঙুর, কেউ চিপস্, কেউ চুইংগাম!! কিন্তু আমরা কোন গাধাই পানি কিনলাম না। আফসুস!!/
এমন সময় টিকেট বিক্রেতা এলেন। শুরু হল ব্যাপক কথা-বার্তা!! আমরা লালনের মাজারে যাচ্ছি শুনে উনি খুব উত্তেজিত। আমাদের বার-বার বলে দিচ্ছেন, বাবার মাজারে গেলে গান শুনবেন। সিদ্ধি টানবেন!! কথা প্রসঙ্গে কবে উনি কতটুকু সিদ্ধি(!!) টেনেছিলেন এটাও বললেন। (তবে এতে তার কতটুকু সিদ্ধিলাভ হয়েছিল, এটা বলেন নাই ) আমরা সবাই মনে মনে বেশ উৎসাহী!! দেখাই যাক না একবার ওখানে গিয়ে!! সেখানে গিয়ে আমরা সিদ্ধির দেখা পেয়েছিলাম!! তবে সে আরেক কাহিনী। ইতিমধ্যে অন্য এক বাসকাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা সেখানে হাজির। তার মুখেও একই কথা। লেগে গেল দু'জনে!! কে বেশি- কে কম!!
এরই মাঝে বাস এসে গেল। আমরা বাসে উঠে পড়লাম। একটু চলতেই আমরা বিমানের ছোঁয়া পেয়ে গেলাম!! ড্রাইভার সাহেব কিছুই মানেন না!! দুই গাড়ির মাঝ দিয়ে সাঁই!! রিকসাকে বামে চাপা দিয়া.. ব্যাপক অভিজ্ঞতা!! তবে এই দৃশ্য বেশিক্ষণ দেখতে পারি নাই। ঘুম!!
হঠাৎ বন্ধুদের ঠেলা-ঠেলি!! উঠ্-উঠ্। আমার কাঁচা ঘুম ভাঙছে। আমি পারলে ওগো গুষ্ঠি উদ্ধার কইরা দেই।( ক্ষেইপা ওদের দিকে তাকাইতেই জানলার দিকে দেখায়।
আমি আগে কখনো যাইনি। আগে কেবল টিভিতে বা পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু ঠিক সেই মূহুর্তে কিভাবে যেন বুঝে যাই, এটিই সেই বিখ্যাত যমুনা সেতু। কতদিন চিন্তা করেছি, সেতু দেখতে যাব। কিন্তু যাওয়া হয়নাই। আর এখন যখন সেতুর উপর, তখন চারিদিকে অন্ধকার। তবু, সেই আঁধারের মাঝেই সেতুর স্ট্রিট লাইটগুলোর আলোয় সেতুকে এত অপূর্ব লাগছিল, আমাকে ঘুম থেকে তোলার অপরাধ সাথে সাথে ক্ষমা!! কিন্তু এই দৃশ্য বেশিক্ষণ দেখতে পারলাম না। ঐ যে.. সড়কপথে বিমানের ছোঁয়া!!
আমরা কুষ্টিয়া এসে পৌঁছাই ভোর ৪.৩০ টায়। কাউন্টারেই বসে থাকি। এরপর সকাল ৬টায় হঠাৎ খেয়াল হওয়ায় কুষ্টিয়াকে বেস্টন করে রাখা গড়াই নদীতে সূর্যোদয় দেখতে ভ্যানে করে রওয়ানা দেই।
অসাধারণ সব দৃশ্য। নিজে না দেখলে অনুভব করতে পারবেন না।
কিছু ছবি দিলাম। আমাদের বন্ধু সাকিব-এর তোলা আর কিঞ্চিৎ ফটুকশপ দেওয়া!
এখানে যে ব্রিজের ছবি, সেটি যমুনা সেতু না। এটি গড়াই সেতু।
পরবর্তী পর্ব
প্রথম প্রকাশ: ২-৩-'০৯ ইং
http://www.somewhereinblog.net/blog/muktoBoyan/28918881
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন